ঢাকা: নিজের পরিবারকে বাঁচাতে কিংবা নিজেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়েই বিক্রি হতে হচ্ছে সিরীয় অনেক নারীদের। বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়া এখন বিধ্বস্ত এক জনপদের নাম। দেশটির পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর শরণার্থী শিবিরে প্রতিদিন বাড়ছে সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা। শরণার্থীদের এই চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। একদিকে খাদ্যের সঙ্কট অন্যদিকে যেকোনো মুহূর্তে আবারও ফিরে যেতে হতে পারে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়াতে এই টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে প্রতিটি সিরীয় শরণার্থীকে। এমতাবস্থায় শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশগুলোর পরিবারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অনেকেই নিজেদের বাঁচাতে চাইছেন।
তেমনি একজন সামিরা ইসমাইল। তিনি তার ছোট বোনকে এমন এক পুরুষের কাছে বিক্রি করতে চান যে পুরুষ তার বোনকে বিয়ে করবে এবং তার গোটা পরিবারের দেখভাল করবে। সম্প্রতি সমিরা এমন এক পুরুষের দেখা পেয়েছেন যিনি সামিরার ছোট বোনের বিনিময়ে তিন হাজার ডলার প্রদান করবেন। এবং চলতি বছরের শেষার্ধে সামিরার পুরো পরিবারকে দেশে পাকাপাকিভাবে থাকার বন্দোবস্ত করে দেবে।
সামিরার পরিবার যদি আজ সিরিয়াতে থাকতো তাহলে হয়তো কোনো এক বসন্তে বিয়ে হতো তার ছোট বোনের। তার কণ্ঠেই অবশ্য ফুটে ওঠে অপারগতার সেই বেদনা, ‘এমন একটা সময় নির্ধারণ করা হতো যখন বেশি গরমও পরবে না আবার বেশি ঠান্ডাও পরবে না। পুরো গ্রামবাসীকে দাওয়াত দিতাম আমরা। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতাম যে অতিথিদের যেন তিন পদের মাংস খাওয়াতে পারি। বোনের হাতে এবং গলায় স্বর্ণের গহনা পরিয়ে বিয়ে দেয়া হতো।’
কিন্তু সামিরাকে যখন তার পরিবার নিয়ে সিরিয়ার হোমস শহর থেকে চলে আসতে হয় তখন একই সঙ্গে তার স্বপ্নও ফেলে আসতে হয়। হোমসের প্রায় এক লাখ ষাট হাজার মানুষ যুদ্ধের ওই সময়টাতে শরণার্থী হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। প্রায় আট মাস আগে সামিরা তার পরিবার নিয়ে জাতারি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহন করেন।
জর্ডানে সামিরার মতো আরও অনেকেই শরণার্থী হিসেবে আছেন। তাদেরকেও টিকে থাকার তাগিদে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে তাদের কন্যা সন্তানদের। তবে এই কাজে সহায়তার জন্য তৈরি হয়েছে একদল দালাল। যারা একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কনের জন্য বর খুজে বের করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল বলেন, ‘ছেলেদের চাহিদা মেটানো খুব মুশকিল। কারণ তারা যেমন নীল চোখের মেয়ে চায় তেমনি আবার সবুজ চোখের অধিকারী মেয়েও চায়। তাদের যতই কম বয়েসী মেয়ের সন্ধান দেয়া হোক না কেন তারা আরও কম বয়েসী মেয়ের সন্ধান করেন।অনেকগুলো দিক বনিবনা হলেই তবে তারা সিরীয় শরণার্থী মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়। প্রতিদিনই অনেক ফোন আসে আমার কাছে নানান বয়সী মেয়ের সন্ধান জানতে চেয়ে। আমার তৎপরতার কারণে যদি কোনো সিরীয় নারীর এবং তার পরিবারের ভাগ্য বদলে যায় তখন খুব ভালো লাগে।’
তবে ডিমা নামের আরেক দালাল জানান, ‘আপনার মেয়েকে যদি ছেলের পছন্দ হয় তাহলে সে দ্রুত বিয়ে করতে চাইবে। তখন আপনার মেয়েকে ছেলের কাছে পাঠাতে হবে। এসময় মেয়েকে কিছু ভালো পোশাক আর প্রসাধন দিয়ে সাজানো হয়। মেয়েকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর ছেলেপক্ষ একটা নির্দিষ্ট সময় মেয়ের পরিবারকে অর্থ প্রেরণ করে। আর এক্ষেত্রে ছেলের বয়স ৪০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে।’
একটা সময় ছিল যখন সিরীয় কোনো নারীকে বিয়ের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হতো ভিনদেশি কোনো পুরুষকে। কিন্তু যুদ্ধ আর সহিংসতা কেড়ে নিয়েছে সিরীয় নারীর সেই অহংকার আর কোমলতা। আজ সিরীয় নারীদের শুধুই শরণার্থী আর পণ্যের মানদণ্ডে মাপা হয়।
সূত্র: বাংলামেইল২৪ডটকম/কে