Monday, June 30, 2014

আমদানী নয়, দেশে তৈরী হচ্ছে ফরমালিন!

ঢাকা, জুন ২৯: ফরমালিন আমদানিতে শর্ত জুড়ে দেওয়ার কারণে নতুন কৌশল নিয়েছেন চতুর ব্যবসায়ীরা! ফরমালিনের পরিবর্তে আসছে প্রায় একই জাতীয় মেডিসিন প্যারা ফরমালডিহাইড। সাদা দানাদার এই মেডিসিন এনে তাপ ও পানি মিশিয়ে দেশেই তা ফরমালিনে পরিণত করা হচ্ছে। সুযোগ বুঝে প্যারা ফরমালডিহাইড আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টেক্সটাইল কারখানা, পার্টিক্যাল বোর্ড, ট্রাক, অটোমোবাইল, মেনুফ্যাকচরিং ও বিভিন্ন পরীক্ষাগারের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ফরমালিন আমদানি হয়। তবে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য পণ্য পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে এই বিষ ব্যবহার করছেন। প্রথম দিকে এই বিষের ব্যবহার ছিলো সীমিত পরিসরে। এই বিষের ব্যবহার (২০১১-২০১২) সালে খাদ্য পণ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১২ সালের মে মাসে ফরমালিন আমাদানির ওপর শর্তারোপ করে সরকার। তবে প্রায় একই জাতীয় মেডিসিন প্যারা ফরমালিডিহাইড’র আমদানির অবাধ সুযোগ রাখা হয়। সেই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছেন ফরমালিন ব্যবহারকারীরা। এ জন্য তাদের নিতে হয়েছে সামান্য কৌশল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কাজে দক্ষ কর্মী জানালেন ফরমালিন তৈরির কৌশল।

তিনি জানান, প্যারা ফরমালডিহাইডে প্রথমে তাপ দিতে হবে। এরপর ৪০ শতাংশ পাউডার ৬০ শতাংশ পানি মিশালেই তৈরি হয়ে যায় ফরমালিন। এতেই পোয়াবারো হয়ে যায় অসাধু ব্যবসায়ীদের সরাসরি ফরমালিন আমদানী না করেই তারা সারা দেশে ফরমালিনের সাপ্লাই অব্যাহত রাখতে পারছেন। সেই ফরমালিন ছড়িয়ে পড়ছে খাদ্যে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১২ সালে সরকার ফরমালিনে শর্ত জুড়লে আমদানিকারকরা প্যারা ফরমালিডিহাইডে ঝুঁকে পড়ে। এতে জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায় প্যারাফরমালডিহাইড আমদানির পরিমাণ।

সূত্র জানায়, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সাদা দানাদার এই পদার্থটির আমদানির পরিমাণ ছিলো ৭৬ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০ কেজি। পরের বছর ২০১২ সালে আমদানির পরিমাণ ছিলো ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭৫ কেজি। কিন্তু এই বছর মে মাসে ফরমালিনে শর্তারোপ হলে শনৈ শনৈ বাড়তে থাকে প্যারাফরমালডিহাইড আমদানী। পরের বছর ২০১৩ সালে আমাদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ কেজি। আর চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই প্যারা ফরমালডিহাইড‘র আমাদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার কেজি।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মারুফুল ইসলাম বলেন, প্যারা ফরমালডিহাইড দিয়ে ফরমালিন তৈরির সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগটি হয়তো দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে কাস্টমস কমিশনার বলেন, প্যারা ফরমালডিহাইড আমদানির ক্ষেত্রেও নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস’র সহযোগী কমিশনার মিনহাজ উদ্দিন পালোয়ান বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন আর ফরমালিন আমদানি করছে না। তবে প্যারা ফরমালিন আমদানি বেড়েছে। আর এতে তাপ ও পানি মিশিয়ে দেশেই তৈরি করা হচ্ছে ফরমালিন।

তিনি বলেন, প্যারা ফরমালডিহাইড আমদানির ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই। তাই যে কেউ ইচ্ছা করলেই প্যারা ফরমালডিহাইড আমদানি করতে পারছেন। আর নীতিমালা না থাকায় এই পণ্যটি আমদানি রোধে কাস্টমসের কিছুই করার থাকছে না।

তিন আরো বলেন, প্যারা ফরমালডিহাইড আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালা তৈরি করা হলে এবং বন্দরে সঠিক তদারকি করা সম্ভব হলে ফরমালিন বিষ থেকে মানুষ অনেকটাই রক্ষা পাবে।


শেয়ারনিউজ২৪/এফএম/১০৪৭ঘ.

কাঁঠালের বিচির ব্যবহার ও পুষ্টিগুণ


ঢাকা, জুন ৩০: আমাদের দেশে কাঁঠালের বিচি খুব জনপ্রিয় খাবার। সবুজ চিচিঙ্গার সঙ্গে কাঁঠালের বিচি মিশিয়ে ছোট মাছ দিয়ে রাঁধা তরকারি, শুটকি মাছের সাথে কাঁঠালের বিচি আর ডাঁটার তরকারি, মুরগি দিয়ে কাঁঠালের বিচি কিংবা কাঁঠালের বিচি ভর্তা এ রকম অসাধারণ সব স্বাদের খাবার তৈরিতে কাঁঠালবিচির ব্যবহার নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। আলুর বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা এই খাদ্য উপকরণটির পুষ্টিমান সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি! যদি না জানা থাকে, আসুন আজ কিছুটা জেনে নেয়া যাক:


পুষ্টি: প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে শক্তি পাওয়া যায় ৯৮ ক্যালরি। এতে কার্বোহাইড্রেট ৩৮.৪ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৬ গ্রাম, ফাইবার ১.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.০৫ থেকে ০.৫৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.১৩ থেকে ০.২৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৪.০৭ মিলিগ্রাম রয়েছে। কাঁঠালের বিচি ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। এ ছাড়া আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, নায়াসিন, লিগন্যান, আইসোফ্ল্যাভোন এবং স্যাপোনিনের মতো ফাইটো ক্যামিক্যালস।

স্বাস্থ্য গুরুত্ব: খাবার হিসেবে যেমন সুস্বাদু ও পুষ্টিমানে ভরপুর তেমনই এর রয়েছে স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব।

১. কাঁঠালের বিচিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্টগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং বার্ধক্যের প্রভাব সৃষ্টিকারি উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।

২. ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এর কারণে এর গøাইসেমিক ইন্ডেক্স কম। ফলে এটি ওজন কম বাড়িয়েই জুগাতে পারে অনেক এনার্জি।

৩. কাঁঠালবিচির প্রোটিন অত্যন্ত উপকারি। মাছ, মাংস যাদের কম খাওয়া হয় তাদের জন্য আমিষের চাহিদা মেটাতে কাঁঠাল বিচি উৎকৃষ্ট খাবার।

৪. কাঁঠালবিচির জীবানুনাশক গুনও রয়েছে। এটিEscherichia coli I Bacillus megaterium ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর এবং এতে থাকা বিশেষ উপাদান (Jacalin) 
এইডস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নে সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

৫. এতে থাকা পটাশিয়াম ব্ল্যাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।

আয়ুুর্বেদিক গুণ: বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র নানা অসুখের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে কাঁঠালের বিচি।

১। কাঁঠালের বিচি বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২। এটি হজম শক্তি বাড়ায়।
৩। কাঠালের বিচি হলোaphrodisiac অর্থাৎ এটি যৌন আনন্দ বাড়ায়। 
৪। ধারণা করা হয় কাঁঠালের বিচি টেনশন ও নার্ভাসনেস কাটাতে উপকারি।
৫। এ্যালকোহল জাতীয় মাদকের প্রভাব দূর করার জন্যও এর ব্যবহার রয়েছে।

আমাদের মতো দেশের যেখানে একটা বড় গোষ্ঠী পুষ্টিচাহিদা মেটাতে অক্ষম সেখানে পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কাঁঠালের বিচি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে পারে। সংরক্ষণযোগ্য বলে সারাবছরই এই পুষ্টি গ্রহণ করা সম্ভব। তাই কাঁঠাল খাওয়ার পর বিচিগুলোকেও সংরক্ষণ করুন আর গ্রহণ করুন এর পুষ্টিমান।

শেয়ারনিউজ২৪/এফএম/ঘ.

Thursday, June 26, 2014

ভাত খাবার পর যে কাজ করা ক্ষতিকর

ঢাকা, জুন ২৬: আমাদের জাতীয় খাবার ভাত ও মাছ। যত মজার খাবারই আমরা খাই না কেন ভাতের মত তৃপ্তি আমরা অন্য কিছুতে মিটে না। এ জন্য আমাদের নামই হয়ে গেছে মাছে ভাতে বাঙ্গালী। শুধু আমরাই নই পৃথিবীতে অন্তত তিনশ কোটি মানুষের প্রধান খাবার ভাত। চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যরক্ষায় ভাত খাবার পর ৫টি কাজ করতে অনুৎসাহিত করেছেন। এগুলো হল- 

১. খাবার পরপর ফল খাবেন না: ভাত খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বা ১/২ ঘণ্টা পর ফল খাবেন। কেননা, ভাত খাওয়ার পরপর কোনো ফল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

২. ধূমপান করবেন না: সারাদিনে অনেকগুলো সিগারেট খেলে যতখানি ক্ষতি হয়, ভাত খাওয়ার পর একটি সিগারেট বা বিড়ি তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি করে। তাই ধূমপান করবেন না।

৩. চা খাবেন না: চায়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ টেনিক এসিড থাকে যা খাদ্যের প্রোটিনের পরিমাণকে ১০০ গুণ বাড়িয়ে তোলে। ফলে খাবার হজম হতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী সময় লাগে। তাই ভাত খাওয়ার পর চা খাবেন না।

৪. বেল্ট কিংবা প্যান্টের কোমর ঢিলা করবেন না: খাবার পরপরই বেল্ট কিংবা প্যান্টের কোমর ঢিলা করলে অতি সহজেই ইন্টেস্টাইন (পাকস্থলি) থেকে রেক্টাম (মলদ্বার) পর্যন্ত খাদ্যনালীর নিম্নাংশ বেঁকে যেতে পারে। পেঁচিয়ে যেতে পারে অথবা ব্লকও হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যাকে ইন্টেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন বলা হয়। কেউ বেশি খেতে চাইলে আগে থেকেই কোমরের বাধন ঢিলা করে নিতে পারেন।

৫. গোসল করবেন না: ভাত খাওয়ার পরপরই গোসল করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে পাকস্থলির চারপাশের রক্তের পরিমাণ কমে যেতে পারে যা পরিপাক তন্ত্রকে দুর্বল করে ফেলবে। ফলে খাদ্য হজম হতে সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী লাগবে।

এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি নিজের স্বাস্থ্যহানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন সহজেই।


শেয়ারনিউজ২৪/এফএম/৯৫৪ঘ. -

Friday, June 20, 2014

রাতের মহিষ দিনে গরু, বিক্রি হয় রক্তও


Fri, 20 Jun, 2014 04:27 PM
গরুর নামে মহিষের মাংস-৩
রাতের মহিষ দিনে গরু, বিক্রি হয় রক্তও
মুনিফ আম্মার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বাংলামেইল২৪ডটকম
মাংস কী গরুর না মহিষেরএমন প্রশ্ন দোকানীকে করলে এককথায় উত্তর নির্ভেজাল গরুর মাংসআর সাধারণ মানুষ বলেন ঢাকায় সবই মহিষের মাংস, বিক্রি হচ্ছে গরুর নামেদ্বিমুখি উত্তরে দ্বিধা বাড়ে, আরো প্রশ্ন জাগেকিন্তু প্রমাণ পাওয়া যায় না কোথাওকেউ জানাতে পারেন না, মহিষ থেকে গরুর মাংস হওয়ার মূল ঘটনাতাহলে রহস্য কোথায়? বাংলামেইলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্যঢাকায় কোত্থেকে আমদানি হয় মহিষ, কোথায় জবাই হয় এগুলো আবার কোথা থেকে বেরিয়ে আসে নির্ভেজালগরুর মাংস হয়েতিন পর্বের এ প্রতিবেদনটি সাজানো হয়েছে মহিষ থেকে গরুর মাংসহওয়ার আদ্যোপান্ত নিয়েসেই সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে কেঁচু খুঁড়তে গিয়ে সাপ পাওয়ারমতো চমকে যাওয়া অনেক তথ্যআজ প্রকাশিত হচ্ছে শেষ পর্বলিখেছেন বাংলামেইলের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মুনিফ আম্মার

ঢাকা: রাতভর মহিষ নিয়ে বিস্তর আয়োজন চলে কসাইখানাগুলোতেজবাইয়ের পর মহিষের কোনো অংশই ফেলনা নয় তাদের কাছেপা থেকে জিভ কিংবা নাড়িভূড়িও বিক্রি করেন তারাঅংশ ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় ওসবতবে কসাইদের মূল টার্গেট থাকে মহিষের মাংসকে গরুর মাংসে রূপান্তরিত করাকাজটা তাদের কাছে খুব কঠিন কিছুও নয়কেবল দিনের আলো ফোটার আগেই কসাইখানা থেকে সরিয়ে ফেলতে  হয় মহিষের চামড়া, মাথা আর পায়ের অংশটুকুকেটে রাখা বাকি অংশ দেখে সহজে কারও বোঝার উপায় থাকে না, এসব আসলে কিসের মাংস

বিক্রিতেই পাল্টে যায় নাম
রাতভর জবাই হওয়া মহিষের মাংস মূলত বিক্রি শুরু হয় ভোর থেকেকসাইখানাগুলো থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা মাংস বিক্রেতারা কিনে নেয় এসবপাশাপাশি ওখানেও চলে দিনভর খুচরা বিক্রিতবে সবাই মহিষের এসব মাংসকে গরু বলেই বিক্রি করেনবিক্রেতা সেজে পাইকারি ও খুচরা একাধিক দোকানে খোঁজ নিয়ে মিলেছে এর সত্যতা

তবে বিক্রি শুরুর আগেই কসাইখানায় রাতের চিত্র পাল্টে ফেলা হয়ধুয়ে মুছে অনেকটা পরিস্কার করা হয় চারপাশমহিষের সব চিহ্ন সরিয়ে ফেলা হয় আশপাশ থেকেভোর ৫টার আগেই সারা হয়ে যায় এসব

সাড়ে ৫টার দিকে একে একে পাইকারি ক্রেতারা ভিড়তে থাকে কসাইখানায়সিএনজি, রিকশা আর ভ্যানগাড়ি করে দোকানে দোকানে নিয়ে যায় মাংসগুলশান ডিসিসি মার্কেটের জাহাঙ্গীর, নিউ মার্কেটের সোলেমান, আজিমপুরের বাবু, বাংলামোটরের নুরুন্নবী আর এলিফ্যান্ট রোডের ওলিসহ অনেকেই কাওরান বাজারের নিয়মিত ক্রেতামহিষের মাংস নিয়ে তাদের দোকানে সেটা গরু বলে চালিয়ে দেন অনায়াসেবিক্রির সময় মহিষের নাম পাল্টে হয়ে যায় গরু

মহিষ না, ইন্ডিয়ান বড় গরু
স্যার, ভালো মাংসনিতে পারেনমহিষের মাংস বেচি নাএইগুলা ইন্ডিয়ান বড় গরুর মাংসএভাবেই এক ক্রেতাকে আশ্বস্ত করতে দেখা গেছে গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেটের ৩নং মাংসের দোকানদার জাহাঙ্গীরকেসাত সকালেই মিথ্যাবলে তিনি ক্রেতাদের কাছে টানছেনভোর সাড়ে ৬টায় কারওয়ান বাজার থেকে কেনা মহিষের মাংস মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাড়ে ৭টায় বিক্রি করছেন ইন্ডিয়ান বড় গরু বলে

তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে খানিকটা বিব্রত হনমুহূর্তেই সেটা কাটিয়ে উঠে বলেন, ‘পরিচিত মানুষের কাছে তো আর বেচি নাপরিচিতদের কাছে মহিষ বইলাই বিক্রি করিআর অপরিচিতরা আইলে ইন্ডিয়ান গরু বইলা চালাইয়া দেই

একই দৃশ্য দেখা গেছে বাংলামোটরের মাংস বিক্রেতা নুরুন্নবীর দোকানেকাওরান বাজার থেকে তিনি কিনেছেন দুইশ কেজি মহিষের মাংসদোকানে এনেই সেগুলোকে গরুর নামে সাজিয়েছেনএকের পর এক ক্রেতারা এসে সেগুলো কিনছে খাঁটিগরুর মাংস হিসেবেই
বিক্রি হয় মহিষের রক্তও
কেবলই মাংস নয়, বোতলে বোতলে বিক্রি হয় জবাই করা মহিষের রক্তকারা কেনে এসব? প্রশ্ন জাগতে পারেসে উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারাই এ রক্তের ক্রেতাপঁচা, দুর্গন্ধময় আর অস্বাস্থ্যকর এ রক্ত দিয়ে কী হয় সেটা খুঁজতে গিয়ে আঁতকে উঠতে হবে

একশ ৭৫ কেজি মহিষের মাংস কিনেছেন আজিমপুর কবরস্থানের পাশের খুচরা ব্যবসায়ী বাবুসঙ্গে তিনি ৩০ টাকা দিয়ে দুই লিটারের একবোতল রক্ত কিনেছেনতার কাছেই জানা গেছে, সকাল থেকে ঝুলিয়ে রাখা মাংসগুলো বিকেলের দিকে অনেকটা শুকিয়ে যাবেতখন এ মাংসকে তাজা করতে মাখানো হবে এসব রক্ত

ক্রেতাদের চোখে ধুলো দেয়ার কাজে ব্যবহৃত এ রক্ত কিনেছেন অন্যান্য খুচরা বিক্রেতারাওএলিফ্যান্ট রোডের খুচরা ব্যবসায়ী নুরুন্নবী নিয়মিত মাংস কেনেন কাওরান বাজারের শহীদ মহাজনের কাছ থেকেপ্রতিদিনই মাংসের সঙ্গে রক্তও কেনেন তিনিতবে রক্ত মাখানো মাংস মানবদেহের জন্য কতোখানি ক্ষতিকর সে বিষয়ে ভাবার কোনো সময় নেই তারবাংলামেইলকে তিনি বলেন, ‘মাংস বেইচ্যা কূল পাই নাএতোকিছু চিন্তা করুম কোন সময়? আর মাংসে রক্ত দিলে ক্ষতি হইবো ক্যান?’
তবে এ বিষয়ে বারডেমের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেলী সাত্তার বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটাতো খুবই ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপারএমনিতেই রক্ত খাওয়ার জিনিস নাতার উপর জমাট বাঁধা কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে রাখা রক্ত যদি মাংসে মাখানো হয়, তাহলে তার থেকে অনেক জীবানু ছড়াতে পারেএজন্য মানুষের লিভার, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেতাই সবাইকে এসব থেকে সাবধানে থাকা উচিৎ

মহিষের মাংস যাচ্ছে নামিদামিরেস্টুরেন্টেও
কেবলই কি খুচরা বিক্রি? গরুর নামে বিক্রি এসব মহিষের মাংস প্রতিদিনই যাচ্ছে রাজধানীর নামিদামিঅনেক হোটেল রেস্টুরেন্টেএমনকি দেশ সেরা হোটেল প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁওয়েও এ মাংস যায় বলে জানা গেছে কসাইদের কাছ থেকে

কসাই হাজী টিপু সুলতান বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমাগো মাংস কে নেয় না? সোনারগাঁ থেইক্যা আইসাও মাংস লইয়া যায়স্টার কাবাবের কিমা বানায় আমাগো মাংস দিয়াইফখরুদ্দিনও কিমার লাইগ্যা আমাগো মাংস নেয়

কসাই হযরত আলী বলেন, ‘ঢাকার অন্তত ৪০টি হোটেলে আমাগো মাংস যায়নীলক্ষেত ধানমণ্ডির সব বিরানীর দোকানে এ মাংস দিয়াই বিরানী হয়সোনারগাঁ হোটেলে রেন্ডি কাবাব বানায় এ মাংস দিয়াকোনটার কথা বাদ দেবেন? সবখানেই গরুর নাম কইরা মাহিষের মাংসই বেচে

কসাইদের এ কথার সত্যতা খুঁজতে কাওরান বাজারের স্টার কাবাবে খোঁজ নেয়া হয়েছেএক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘কিমা তো সব মহিষের মাংস দিয়াই হয়মহিষের মাংস ছাড়া অন্য মাংস দিয়ে কিমা বানানো অনেক কঠিন কাজ

খবর নেইভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের
হরহামেশা ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে গরুর নামে মহিষের মাংস বিক্রি করা হলেও এ বিষয়ে কোনো খবর নেইজাতীয় সংরক্ষণ অধিদপ্তরেরবিষয়টি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্যও তাদের কাছে নেইএকইসঙ্গে এ বিষয়টি সিটি করপোরেশনের দেখার দায়িত্ব বলেও দায় সেরেছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্তা

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিঞা বাংলামেইলকে বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে কেউ কোনোদিন আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেনিকেউ অভিযোগ করলে সেটা আমরা খতিয়ে দেখতাম

তিনি আরো বলেন, ‘সিটি করপোরেশন গরু আর মহিষের মাংসের আলাদা দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরে কোনো বিক্রেতা যদি তার চেয়ে বেশি মূল্য রাখে তাহলে সে বিষয়টি আমরা আমলে নিবোএছাড়া কোথায় গরু বা মহিষের মাংস কোন নামে বিক্রি হয়, সে বিষয়ে খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের

সীমাবদ্ধাতার দোহাই দিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনো যন্ত্র নেই যে, জবাইয়ের পরে কোনটা গরু বা কোনটা মহিষের মাংস সেটা প্রমাণ করা যাবেকখনো কোনো ক্রেতা প্রমাণসহ এ নিয়ে অভিযোগ করলে আমরা দেখবো
বাংলামেইল২৪ডটক/ এমএ/ এস